লামায় প্রতিবেশির নির্যাতনের শিকার এক প্রান্তিক পরিবার

মো.কামরুজ্জামান, লামা: ৮ আগষ্ট
লামায় প্রতিবেশির হামলায় এক পরিবারের নারী-শিশুসহ ৮জন আহত। ভ‚মি দখল ও
পারিবারিক সম্পর্কের জের ধরে হামলার ঘটনা বলে জানাযায়। এ ব্যাপারে সম্প্রতি
লামা প্রেসক্লাব কর্মর্তাদের সরেজমিন অনুসন্ধানে হামলার বহুমুখি বিবরণ
ফুটে উঠেছে।
এর মধ্যে কোরবানি ঈদের দিন রাতে প্রতিবেশি জামালের ছেলে পারভেজ (১৮)কে
রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে বশির সর্দার এর বাড়িতে বেধেঁ রাখে। একই সময় সপ্তম
শ্রেণিতে পড়–য়া ছাত্রী জামালের শালীকা তার জন্য ভাত নিয়ে দোকানে আসার পথে
উঁৎপেতে থাকা বশির সর্দারের ছেলে ও ভাতিজাগং মিলে মেয়েটিকে জোরপূর্বক
টেনে হেচড়ে পাশ্ববর্তী জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে জামালের
পরিবারের লোকজন মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য আসলে তাদের উপর বশির সর্দার গং
এলোপাতড়ি হামলা করে। এতে ছলেমা খাতুন (৫৫),পারভীন আক্তার (৪০), সুমি আক্তার
(২৫), রোমন (১৮), সোনিয়া আক্তার (১১), ইমন (১৪)সহ ৮ জন নারী ও শিশু আহত হয়।
ওই সময় রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় তারা লামা উপজেলা
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হয়। এর আগে নির্যাতিতরা হামলার বিষয়টি লামা থানায়
অবহিত করেন। নির্যাতিত পারভীন আক্তার জানান, বশির সর্দার গং
পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের উপর হামলা চালায়।
স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ, হামলার সময় সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আবদুর রহমান (মনু)
উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বশির সর্দারের অপর সহোদর জহির ও দলিল সরকার দলীয়
রাজনৈতিক সমর্থক ও তৃণমুলে নেতৃত্ব দিচ্ছে এদের একজন। এর ফলে তাদের
অন্যায়-অবিচারের বিষয়ে কথা বলার সেই গ্রামের কারোর সাহস হচ্ছেনা।
নির্যাতিত পারভীন জানান, এর আগেও তার ভাই আবু সালামের একটি সিএনজি
জোরপূর্বক আটক করে রাখে। এ ব্যাপারে আবু সালামের বড় ভাই লামা থানায়
একটি অভিযোগ করলে পুলিশ ওই গাড়িটি উদ্ধার করে দেয়। পারভীন আরো জানান,
তারা প্রান্তিক কৃষক। তার স্বামী জামাল, দলিল আহম্মদকে ছয় হাজার টাকা দিয়ে
দেড় কানি জমি কৃষি ফসলে জন্য লাগিয়ত নেয়। কিন্তু দলিল ওই জমি তাদেরকে চাষ
করতে দেয়নি এবং টাকা ফেরৎ দেয়নি। এ বিষয়ে কৃষক জামাল সংশ্লিষ্ট (লামা সদর)
ইউনিয়ন পরিষদে বিচার দিয়েও কোন সুরাহা পাননি।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, প্রান্তিক কৃষক জামাল দক্ষিণ মেউলার চর
রাস্তার পাশে ভ‚মির মালিক জনৈক ইউছুপ আলীর প্রতিনিধি থেকে ২০ শতাংশ
জমি বাৎসরিক খাজনা নির্ধারণ চুক্তিমূলে সেখানে একটি টিনসেট দোকান
(মাটির গুদাম) ঘর করে ভোগদখল করছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় এক দশক ধরে জামাল সেখানে চায়ের দোকান করে পরিবারের
জীবিকা নির্বাহ করছে। সম্প্রতি বশির সর্দার ওই জমিটির প্রতি লোলুপ দৃষ্টি
দেয়। জমি থেকে জামালকে সরানোর জন্য নানান ষড়যন্ত্র, নানা অজুহাতে হামলা,
হুমকিসহ ভয়ভীতি দেখিয়ে চলছে। ওই দোকানে কোন ক্রেতা যেতে দেয়া হয়না! নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের কয়েকজন জানান, বশির সর্দার, তার ছোট ভাই দলিল ও
জহির রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে প্রায়ই সময় জামালের পরিবারের উপর হামলা ও
তাদের দোকান ঘরটি দখল করতে চায়। প্রভাবশালী হওয়ায়, তাদের বিচার কেউ করতে
পারেনা!
সরে জমিন অনুসন্ধানকালে এ বিষয়ে দলিল আহম্মদের কাছে জানতে চাইলে, সে
মারপিটের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যমান দোকান ঘরটি জামালদের। “কিন্তু
সেখানে কোন কাস্টমার যাওয়ার উপর আমার আপত্তি রয়েছে”। কারন হিসেবে দলিল
বলেন, ওই দোকান ঘরে তার নিখোঁজ মেয়ের ব্যাবহ্নত কাপড় পাওয়া গেছে।
এসব ঘটনার গভীরে রয়েছে একটি প্রেমঘটিত কাহিনী। জানাযায়, দলিলের মেয়ে
সাহেদা আক্তার সুমি ও জামালের শ্যালক আবু সালাম পালিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হয়। এরা উভয়ে পূর্বে বিবাহিত। সুমি তার স্বামী ও আবুসালাম তার স্ত্রী ও এক
সন্তান রেখে পরস্পর যোগ সাজসে পালিয়ে যায়। এদিকে সুমির পিতা দলিল এই
ঘটনায় লামা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মালায় উল্লেখ করা হয়, সুমি তার
বাবার বাড়ি থেকে নগদ ৭৫ হাজার টাকা ও তিনভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়। কিন্তু
সুমি মোবাইল ফোনে জানায়, তার বাবার দাবীটি মিথ্যা; সে কোন টাকা বা
স্বার্ণালঙ্কার নেননি। আবু সালামকে ভালোবেসে স্বেচ্ছায় বিয়ে করে তারা সুখে
শান্তিতে আছে। মূলত : এসব ঘটনার জের ধরে দু’পরিবারের মধ্যে একের পর এক
সমস্যা চলছে বলে জানান গ্রামবাসীরা।
এ ব্যাপারে লামা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এর কাছে জানতে চাইলে; তিনি বলেন,
দু’পরিবারে মধ্যে বিরাজমান সমস্যা নিরষনে আমরা চেষ্টা করেছি। ইউপি সদস্য
আবদুর রহমান (মনু) জানান, ঈদের দিন রাতে সেখানে ঝগড়া বিবাদ থামানোর
চেষ্টা আমি নিজেই করেছি। সে জানায়, সেখানে জামাল দীর্ঘদিন দোকান ঘর
নিয়ে অন্য একজনের প্রজা হিসেবে দখলে রয়েছে।
লামা থানা অফিসার ইনচার্জ এর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, “ভিকটিম
আমার কাছে আসেনি, আসলে ব্যাবস্থা নেব”। তবে তাদের করা একটি জিড়ি ও
একটি অভিযোগ এর তদন্ত কাজ চলমান।