লাঞ্ছিত হয়ে কানেকটিকাট ছাড়লেন ইমাম জোবায়ের!

বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক: মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ কর্তৃক লাঞ্ছিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্য ছেড়ে গেলেন ম্যানচেস্টারে বায়তুল মামুর মসজিদের সাবেক পেশ ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা জোবায়ের আহমেদ। গত বছর ১২ অক্টোবর (২০১৯) ইমাম জোবায়ের আহমেদ মাদ্রাসায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বায়তুল মামুর মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়ার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। দুঃখ আর কষ্ট নিয়ে সাড়ে ১০ মাস ম্যানচেস্টারে অবস্থানের পর গত ২৮ আগস্ট তিনি কানেকটিকাট ছেড়ে মিশিগান অঙ্গরাজ্যে চলে যান।মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর শনিবার সকাল ১০টার দিকে বায়তুল মামুর মসজিদের পেশ ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা জোবায়ের আহমেদ যথারীতি মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশ নিচ্ছিলেন। মাদ্রাসার নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে আসার কথা থাকলেও প্রায় ১০/১৫ মিনিট বিলম্বে নিজের ছেলেকে নিয়ে আসেন মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়া। তিনি দরজার কড়া নাড়তে থাকেন। ভেতর ক্লাশ চলছিল তাই কড়ার শব্দ বুঝতে পারেননি ইমাম জোবায়ের আহমেদ। দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় ইমামের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তারেক আম্বিয়া। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকেন ইমামকে। ইমাম তাকে ভদ্রভাবে কথার বলার অনুরোধ করলে তিনি আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে তারেক ইমামকে বিভিন্ন পশুর সঙ্গে তুলনা করেন। এ কারণে ইমাম জোবায়ের আহমেদ চরম লাঞ্ছিতবোধ করেন। মনে কষ্ট নিয়ে তিনি নিজ বাসায় ফিরে যান। সেদিন থেকে তিনি আর বায়তুল মামুর মসজিদে আসেননি। মসজিদ কমিটির সকলেই ঘটনাটি জানলেও মিমাংসার বদলে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে ইমামের সাথে গোপনেও বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টাও চলে।কিন্ত ইমাম জোবায়ের আহমেদ সাফ বলে দিয়েছেন অভিযুক্ত ব্যক্তি সরাসরি তাঁর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। ইমামের শর্তানুযায়ী গত ১৭ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার রাতে মসজিদে এশার নামাজের সময় কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়া ইমাম মাওলানা জোবায়ের আহমেদের ম্যানচেস্টারের বাসায় গিয়ে অনাকাংখিত বেয়াদবির জন্য ক্ষমা চান। এ সময় বেশ কিছু মুসল্লিও উপস্থিত ছিলেন।
পরদিন ১৮ অক্টোবর ২০১৯ শুক্রবার জুমার নামাজ পড়াতে মসজিদে ফিরে আসন ইমাম জোবায়ের। তিনি তাঁর খুতবার শুরুতেই অর্থ ও ক্ষমতার দম্ভ সংক্রান্ত খুতবা পেশ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করার কথা জানান মুসল্লিদের। ইমামকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় মসজিদ কমিটির সদস্য বা মুসল্লিরা প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে কিংবা প্রতিবাদ করারও সাহস পাননি। তবে অধিকাংশ মুসল্লিরাই এ ধরনের জঘন্য অপরাধের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনাসহ মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে তারেক আম্বিয়াকে বহিস্কারের দাবি জানালেও কোন ফল হয়নি।
এ ব্যাপারে ইমাম মাওলানা জোবায়ের আহমেদের কাছে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি অনেকেই জানেন। এ বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাইনা। নিজের ভুল স্বীকার করে কেউ যদি ক্ষমা চান তাকে ক্ষমা করে দেওয়াটাই মহৎ কাজ। তাই আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
প্রায় ১২ বছর আগে মসজিদ নির্মাণের প্রাক্কালে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হারুন আহমেদ ও জাহেদ চৌধুরী লিটন সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছেন। এশিয়ান গ্রোসারী দোকানের বেসমেন্টে মুসলীদের জন্য নামাজের জায়গা তৈরি করে দিয়েছিলেন। কয়েক বছর আগে কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়া মসজিদের ভেতরেই হারুন আহমেদকে লাঞ্ছিত করে তাকে মসজিদ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তারেক আম্বিয়ার স্ত্রী সুফিয়া আম্বিয়ার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন বাক-এর সাবেক গণসংযোগ সম্পাদক ও সংস্কৃতসেবী রওনাক আফরোজ। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়েন বাংলাদেশিরসহ স্থানীয় মুসল্লিরা। কয়েক বছর আগে একটি অডিট কমিটির দ্বারা মসজিদের হিসেব নিকাশের অডিট করা হলে ব্যাপক পরিমাণ অর্থের গড়মিল খুঁজে পান। মসজিদের হিসেব নিকেশ নিয়ে কেউ কথা বললেই তাকে মসজিদ কমিটি থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মসজিদের নেতৃত্বের আধিপত্য ও আঞ্চলিকতা পরিহার করে এসব ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে অবিলম্বে কোষাধ্যক্ষ তারেক আম্বিয়াকে বহিস্কারের দাবি জানিয়েছেন মুসল্লিসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
ম্যানচেস্টারে বায়তুল মামুর মসজিদের পেশ ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা জোবায়ের আহমেদের কানেকটিকাট ছেড়ে মিশিগান যাবার কথা শুনে গত ২৭ আগস্ট তাঁর সাথে দেখা করেন বেশ কয়েকজন মুসল্লি। এ সময় মনের ভেতরে জমে থাকা তাঁর দুঃখ আর কষ্টের কথা তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলে হয়তো আর কখনো কানেকটিকাটে আসা হবে না। সাধারন মুসল্লিদের ভালবাসা পেয়েই এতদিন ম্যানচেস্টারেই ছিলাম।
উল্লেখ্য মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ কর্তৃক লাঞ্ছিত হবার পর ইমামতি ও মাদ্রাসার শিক্ষকতা ছেড়ে ট্যাক্সি চালিয়ে সাড়ে ১০ মাস জীবিকা নির্বাহ করেছেন ইমাম মাওলানা জোবায়ের আহমেদ।