ইয়াবায় অর্থলগ্নীকারীদের সনাক্তে সাঁড়াশি অভিযান আসছে

শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক
ইয়াবা চোরাচালান প্রতিরোধে অর্থ লগ্নীকারীদের সনাক্তে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্যে সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংকে এ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করা হয়েছে। সহায়তা নেওয়া হবে চেম্বারসমূহের। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক টাস্কফোর্সের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় জানান হয়, সম্প্রতি কোটি কোটি টাকার ইয়াবার চালানে প্রমাণিত হয় এতে বড় বড় রাঘব-বোয়ালরা সক্রিয় রয়েছেন। তারা বিভিন্ন পথ ঘুরে ইয়াবার অর্থ মায়ানমারে পৌঁছায়। তাদের মূলোৎপাটনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারলেই ইয়াবা ব্যবসায় বন্ধ হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ এর সভাপতিত্বে সভায় চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিএমপি পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, র্যাবের ডেপুটি সিইও, বিজিবির আঞ্চলিক কমান্ডারগণ, জেলা প্রশাসকগণ, পুলিশ সুপারগণসহ টাক্সফোর্সের অন্যান্য সদস্যগণ জুম এ্যাপসের মাধ্যমে সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সভায় আগস্ট মাসের টাক্সফোর্সের বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় সীমান্ত চোরাচালান বিশেষত ইয়াবা চোরাচালানের বিষয় ওঠে আসে।
সভায় ইয়াবা চোরাচালান প্রতিরোধে আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম সভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মায়ানমার সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধে গৃহীত কৌশলে কোন ঘাটতি আছে কীনা, অথবা কার্যকর প্রতিরোধে আর কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায় কীনা এ বিষয়ে তিনি আলোচনা দাবী করেন।
সভায় রেঞ্জ ডিআইজি জানান, ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলায় পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। যৌথ কর্মপন্থা ঠিক করতে বিজিবির সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে এবং টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বিজিবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের ডেপুটি কমান্ডার সভায় জানান, বিজিবির প্রত্যেকটি ব্যাটেলিয়ন পূর্বের তুলনায় আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করার ফলে সম্প্রতি ইয়াবার বেশ কিছু বড় বড় চালান আটক করা সম্ভব হয়েছে। নজরদারী জোরদার করা হয়েছে বলে তিনি সভাকে অবহিত করেন।
বিজিবির কক্সবাজার অঞ্চলের কমান্ডার সভায় জানান, ইয়াবা চোরাচালান আটক প্রতিমাসেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা হ্রাস করতে না পারলে ইয়াবা চোরাচালান প্রতিরোধ কষ্টকর হয়ে পড়বে । তিনি সভাকে আরো অবহিত করেন, ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত স্থানীয়রা বিজিবির পেট্রোল টহলের গতিবিধি চোরাচালানীদের তাৎক্ষনিক জানিয়ে দেওয়ায় অনেক সময় নিশ্চিত চোরাচালানও আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কাজে তারা মায়ানমারের মোবাইল সিম ব্যবহার করে। তিনি সভায় আরও জানান, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঘুনধুম-বাইশপাড়ি সীমান্তে ১০ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, টেকনাফ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ নির্মান শেষ হলে সেখানেও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে।
সভায় কোস্টগার্ডের কক্সবাজার অঞ্চলের কমান্ডার জানান, নদীপথে চোরাচালান প্রতিরোধে টহল জোরদারের ফলে সম্প্রতি বেশ কিছু চোরাচালান আটক করা সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে কোস্টগার্ড আকস্মিক অভিযান বৃদ্ধি করবে বলে তিনি সভাকে অবহিত করেন।
সভায় র্যাবেরে ডেপুটি সিইও জানান, ইয়াবা চোরাচালান প্রতিরোধে বহনকারীর পাশাপাশি সন্দেহজনক লেনদেন ও লেনদেনের নতুন নতুন কৌশল উদঘাটনে র্যাব কাজ করছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু সন্দেহজনক লেনদেন সনাক্ত করা হয়েছে। র্যাব মনে করে ইয়াবায় অর্থলগ্নীকারীদের আইনের আওতায় আনতে পারলে চোরাচালান কমে আসবে।
সিএমপি কমিশনার সভায় বলেন, মাদক সমাজে সকল অপরাধের জনক। একে শক্তভাবে নির্মূল করে যুবসমাজ ও দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য সিএমপির অধীন এলাকায় মাদকে অর্থ লগ্নীকারীদের সনাক্তে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে
সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ চোরাচালানীরা জাতির শত্রু। সকল কর্ণার থেকে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এদের প্রতিরোধ করতে হবে।
বিশেষত চোরাচালানে অর্থ লগ্নীকারীদের আইনের আওতায় আনতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সাথে সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানের কুফল নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে সকল বাহিনীর সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
শেয়ার করুন